ইউসুফ সুমন, মোংলা : মোংলায় ক্লিনিকে ডাক্তার না থাকায় আবারও নিজে ডাক্তার ও স্ত্রী নার্স সেজে অপারেশন করায় অনার্স পড়–য়া এক কলেজ ছাত্র মৃত্যু শয্যায় পড়ে আছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ৬ সেপ্টেম্ব সকাল সাড়ে ১১টার দিকে মোংলার মাদ্রাসা রোড এলাকায় রাব্বি কিনিক এন্ড ডায়েগনষ্টিক সেন্টার কিনিকে পেটের ব্যাথা নিয়ে ভর্তি হয়। দুপুরের দিকে নিজেই এ্যাপেন্ডিস অপারেশন করেন মালিক এনামুল। এতে ওই কলেজ ছাত্রের খাদ্য নালী কেটে গেলে মুমুর্ষ অবস্থায় তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। এব্যাপারে গতকাল দুপুরে কলেজ ছাত্রের অসহায় বাবা মোঃ ফজলু শেখ বাদী হয়ে কিনিকের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক এনামুল কবিরকে আসামী করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মোংলা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। বার বার ওই কিনিকের অপ-চিকিৎসার ঘটনা নিয়ে পুরো উপজেলা ব্যাপি জনমনে মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
থানার অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, মোংলা উপজেলার সুন্দরবন ইউনিয়নের উত্তর বাজিকরের খন্ড গ্রামের দিন মজুর মোঃ ফজলু শেখ’র চতুর্থ ছেলে সিরাজুল ইসলাম (২৪) হঠাৎ পেটে ব্যাথা অনুভাব করে। কিছু সময় পরে পেটে প্রচন্ড ব্যাথা শুরু হলে দ্রুত তাকে মোংলা পোর্ট পৌরসভার মাদ্রাসা রোডস্থ্য রাব্বি কিনিকে ভর্তি করা হয়। অসুস্থ্য মোঃ সিরাজুল ইসলাম ঢাকা ইসলামী বিশ্ব বিদ্যালয়ের অনার্স অধ্যায়নরত ছাত্র। তার বাড়ী মোংলা উপজেলার সুন্দরবন ইউনিয়নের বাজিকর খন্ড গ্রামে। অসুস্থ্য অবস্থায় ভর্তির পর ওই কিনিকের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক মোঃ এনামুল কবির সিরাজুলকে পেটের ব্যাথা কমানোর ওষুধ দেয় এবং বিকাল ৩টার দিকে খুলনা থেকে ডাক্তার এসে এ্যাপেন্ডিস অপারেশন করবে বলে বাবা ফজলু শেখ’কে জানায় কিনিক মালিক এনামুল। দুপুর দেড়টার দিকে সিরাজুলের বাবা নামাজে গেলে এর ফাঁকে এনামুল নিজে ডাক্তার ও তার স্ত্রীকে নার্স সাজিয়ে সিরাজুলের অজ্ঞান করে পেটে অস্ত্রপাচার করে বলে তার বাবা অভিযোগে উল্লেখ করেন। অপারেশনের অস্ত্রপাচারের সময় ভুল বশত খাদ্যনালী কিছু অংশ কেটে গেলে প্রচুর রক্ত ক্ষরন শুরু হয়। রাতভর ওই কিনিকের বেডে যন্ত্রনায় ছটফট করতেছিল অসুস্থ্য সিরাজুল বলে জানায় তার পরিবারের সদস্যরা। ৭ সেপ্টেম্বর সকালে সিরাজুলের অবস্থা অবনতি দেখে দ্রæত খুলনা মেডিকেলে নেয়ার পরামর্শ দেয় এনামুল। পরিবারের সদস্যরা অচেতন অবস্থায় এ্যাম্বুলেন্স যোগে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউ ইউনিটে ভর্তি করে সিরাজুলকে। সেখানে সিরাজুল মুমুর্ষ অবস্থায় রয়েছে বলেও জানায় তার বাবা।
উল্লেখ্য, গত ২৯ জুন এক সন্তান সম্ভাবা অপরিপক্ক মায়ের জোর পুর্বক সিজার করানোর ফলে জন্ম নেয়া শিশুটি অপরিপক্ক দেখে অন্যাত্র নেয়ার জন্য দ্রæত কিনিক থেকে বের করে দেয় মালিক এনামুল। ৩০ জুন বুধবার বিকালে খুলনা শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় শিশুটি মারা যায়।
এছাড়াও ত্রুটিপূর্ণ সিজারে প্রসূতি ও নবজাতকের জীবনবিপন্নের প্রতিবাদে গত ২০১৯ সালের ১৩ ফেব্রয়ারী খুলনা প্রেস কাবে এক সংবাদ সম্মেলনও করে মোংলার বাসিন্দা মোঃ রাজু নামের এক বাবা। সিজারের সময় ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ বিশেষ পেটের মধ্যে থেকে যাওয়ায় প্রসুতির পায়খানা ও প্রসাবের নালী ছিদ্র করে ফেলে ডাক্তার ও কিনিক মালিক এনামুল।
ইতি পুর্বেও রাব্বি কিনিকের বিরুদ্ধে অবৈধ গর্ভপাত ও অনৈতিক কর্মকান্ডেরও বহু অভিযোগ রয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেরই অভিযোগ করেন।
অসুস্থ্য সিরাজুলের বাবা মোঃ ফজলু শেখ বলেন, ডাক্তার বিহীন এনামুল নিজে ও তার অনভিজ্ঞ নার্সের মাধ্যমে অস্ত্রপাচার করে আমার ছেলের ভুল অপারেশন করিয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে এনামুল। এনামুলের এহেন কার্যকলাপের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানায় পিতা ফজলু শেখ।
বাগেরহাট ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, অনেক দিন থেকেই মোংলার রাব্বি কিনিকের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ শোনা যাচ্ছ। তবে সম্প্রতি এক কলেজ ছাত্রের অপারেশনের ঘটনায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ জিবেতোষ বিশ্বাস ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে অলোচনা করে প্রয়োজনে কিনিকটি সিলগানা করার ব্যাবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
মোংলা থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মাদ মনিরুল ইসলাম বলেন, সিরাজুলের বাবা ফজলু শেখ’র দেয়া একটি অভিযোগ পেয়েছি। ইতি পুর্বে ওই কিনিকের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ রয়েছে তাই পুর্বের এ সকল বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। খুলনায় চিকিৎসারত সিরাজুলের ব্যাপারেও খোজ খবর নেয়া হচ্ছে। তদন্ত চলছে, দ্রæত ব্যাবস্থা নেয়া হবে বলেও জানায় পুলিশের এ কর্মকর্তা।