নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ রাষ্ট্রপ্রতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার ও সেরা করদাতা নির্বাচিত হওয়ায় কুষ্টিয়ায় বিআরবি গ্র“প চেয়ারম্যান মজিবর রহমানকে সংবর্ধনা দিয়েছে কুষ্টিয়া চেম্বার অব কমার্স। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কুষ্টিয়ার দিশা অডিটোরিয়ামে বিআরবি গ্র“পের চেয়ারম্যান আলহাজ¦ মজিবর রহমান রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার-২০১৯ ও ২০২০-২১ করবর্ষে কুষ্টিয়ার সর্বোচ্চ আয়কর দাতা সম্মাননা পাওয়ায় এ সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। কুষ্টিয়া চেম্বারের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাজি রবিউল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনের সাংসদ আ কা ম সরওয়ার জাহান বাদশা, কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব সদর উদ্দিন খান, সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আসগর আলী, কুষ্টিয়া নাগরিক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ এস এম মুস্তানজিদ। এ সময় বিআরবি চেয়ারম্যানের দুই পুত্র ও জামাত উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ সদর আসনের সংসদ সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফ বক্তব্যে বলেন, বিআরবি গ্র“প অব ইন্ডাস্ট্রিজ একদিনে প্রতিষ্ঠা লাভ করেনি। এই গ্র“পের যে ৭টি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে তা দিনের পর দিন বছরের পর বছর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। নিষ্ঠা ও সততা ছিল বলেই কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছতে পেরেছেন মজিবর রহমান। প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ আরো বলেন আজ বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল বলেই মজিবর রহমানের মত শিল্পপতির জন্ম হয়েছে। আজ যদি বাংলাদেশ স্বাধীন না হতো, বাংলাদেশ যদি পরাধীন থাকত তাহলে হয়ত এই চেস্টা সফল হতনা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে আমরা দেশ স্বাধীন করেছিলাম বলেই মজিবর রহমানের মত ব্যক্তিরা শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার সুযোগ পেয়েছেন। এসময় তিনি আলহাজ¦ মজিবর রহমানকে শিল্পপতিদের আইকন বলেও উল্লেখ করেন। সংবর্ধিত অতিথি বিআরবি গ্র“পের চেয়ারম্যান আলহাজ¦ মজিবর রহমান বলেন- আজ আমি রাষ্ট্রপতি শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার বৃহৎ শিল্প ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছি সেটা কুষ্টিয়াবাসীর জন্য। তিনি বলেন, প্রথম যেদিন ঢাকা যায় সেদিন পকেটে মাত্র ৭০০ টাকা ছিল। ব্যবসা শুরু করেছিলাম সেদিন ব্যাংক থেকে মাত্র ৫ হাজার টাকা পেয়েছিলাম। একটা সিগারেট তিনবার খেয়েছি। শিশু ছেলেদের মুখে দুধ দিতে পারিনি। তিনি আরো বলেন, আজ ব্যাংক থেকে ৭ হাজার কোটি টাকা দিতে অনুমোদন হয়েছে। আমি নিই নাই। আমার টাকার দরকার নাই। সততা নিয়ে কাজ করলে পরিশ্রম করলে সফলতা আসবেই…। নিজের হেলিকপ্টারে চড়ে উপর থেকে কুষ্টিয়ার দিকে তাকালে বুকটা ভরে যায়। কুষ্টিয়াকে ঢাকার মতো লাগে। কুষ্টিয়ায় থেকে কুষ্টিয়াকে আরও উন্নত করতে চাই। আলহাজ্ব মজিবর রহমান আরো বলেন- আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করেছি কুষ্টিয়ার মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য কিছু করার। আরো ইচ্ছে রয়েছে। যতদিন বেঁচে থাকব সেই চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। কিন্তু কিছু মানুষ আমার সেই কর্মতৎপরতাকে থামিয়ে দিতে চাই। কেন তারা এমনটি করে তা আমি জানিনা। বক্তব্যের এক পর্যায়ে আজকের সফল শিল্পপতি হওয়ার পেছনের গল্প বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুুত হয়ে পড়েন। সাবলিল বক্তব্য উপস্থিত আমন্ত্রিত অতিথিদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। এর আগে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফ সংবর্ধিত অতিথি আলহাজ¦ মজিবর রহমানকে সন্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন। সংবর্ধণা অনুষ্ঠানে আলহাজ¦ মজিবর রহমানের দুই ছেলে বি আর বি গ্র“পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পারভেজ রহমান, এম আর এস ইন্ডাস্ট্রির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামসুর রহমান, কিয়াম মেটাল ইন্ডাস্ট্রির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেজবার রহমান বাবুলও যোগ দেন। উল্লেখ্য, কুষ্টিয়া জেলার কৃতিসন্তান মজিবর রহমান ১৯৭৯ সালে ২৩ অক্টোবর কুষ্টিয়ার বিসিক শিল্পনগরীতে প্রতিষ্ঠা করেন বিআরবি (বজলার রহমান এবং ব্রাদার্স) কেবল ইন্ডাস্ট্রিজ লিঃ। ১৯৯৪ সালে গোটা দেশে বিদ্যুতায়নের প্রসার ঘটলে তিনি কেবল উৎপাদন বাড়িয়ে দেন এবং ১৯৯৬ ও ২০০০ সালে উন্নতবিশ্বের উন্নত যন্ত্রপাতি স্থাপন পূর্বক কারখানাটির সম্প্রসারণ করেন। বর্তমানে উন্নত ও গুণগত মান সম্পন্ন পণ্য উৎপাদন করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের কেবল বাজার দখল করে নিয়েছে। বর্তমানে এই শিল্পের উৎপাদিত পণ্য ব্রিটেন, জার্মানী, জাপানসহ বিশ্বের অনেক দেশে রপ্তানী করা হচ্ছে।