নিজস্ব প্রতিবেদক॥ কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের অংগ সংগঠন জাতীয় যুবজোট উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাহবুব খান সালাম হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে দৌলতপুর থানায়। এমামলায় এজাহার নামীয় ৩জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

শুক্রবার রাতে নিহতের পিতা আলাউদ্দিন খান ওরফে এনামুল হক বাদি হয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ও উপজেলার ৭নং হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সেলিম চৌধুরী ও তার ভাই উপজেলা যুবলীগের সভাপতি বুলবুল আহমেদ চৌধুরী ওরফে টোকন চোধুরীসহ ২২জনের নামোল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরও ৮/১০জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে দৌলতপুর থানা পুলিশ।

গ্রেফতার হলেন- উপজেলার সোনাইকুন্ডি গ্রামের বাসিন্দা ফজলু মালিথার থেকে নজিবুল কসাই(৩৬), সাজ্জাদ হোসেনের ছেলে মেহেদী(২৬) ও তুরাফ আলীর ছেলে সোহানুুর সোহান (২৮)।

এদিকে ঘটনার পর থেকে জাসদ ও যুবজোটের পক্ষ তেকে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে হত্যাকান্ডে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশসহ নানা কর্মসূচী পালন করছেন। অন্যদিকে হত্যাকান্ডে জড়িত অভিযোগ এনে যাদের এজাহার নামীয় আসামী করা হয়েছে তাদের সমর্থকরাও মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে বিশাল জনসমাবেশ ও মিছিলসহ বিক্ষোভ করেছে। এমন মুখোমুখি পরিস্থিতে আইন শৃংখলা পরিস্থিতি যে কোন সময় ভেঙ্গে পরার আশঙ্কা স্থানীয়দের।

এমামলার বাদি নিহতের বাবা এনামুল হকের অভিযোগ, “সালাম হত্যাকান্ডে জড়িতরা এবং এজাহার নামীয় ব্যক্তিরা স্থানীয় ও রাজনৈতিক ভাবে এতই প্রভাব ও শক্তিশালী যে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেও আমি এখন পরিবার পরিজন নিয়ে চরম ভাবে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি।” এই বুঝি আমার পরিবারের আরও কোন সদস্যকে ধরে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলবে।’ সাবেক এমপি রেজাউল হক চৌধুরীর আপন ছোটভাই সেলিম চৌধুরী, টোকেন চৌধুরী, লোটন চৌধুরীসহ ওই পরিবোরের বেশ কয়েকজন এই মামলার আসামী। ওরা আজকে শুধু সালাম কে মেরে ফেলেছে তাই না, এদের বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরন, মাদক, অগ্নি সংযোগ, লুটপাট, ডাকাতি, ছিনতাইসহ অসংখ্য মামলা রয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় এতোকিছু করেও পার পেয়ে যায় বার বার। এছাড়া অধিকাংশ ঘটনায় এদের বিরুদ্ধে থানায় এসে মুখ খোলার সাহস পান না। তাদের জুলুম অত্যাচারে অতিষ্ট মানুষ সবকিছু মুখ বুজে সহ্য করে আসছে।”

প্রত্যক্ষদর্শী নিহত মাহবুব খান সালামকে বহনকারী ভ্যান চালক জানান, বুধবার রাত ১১টার দিকে আল্লারদর্গা বাজার থেকে আমার ভ্যানে সালাম ভাইকে নিয়ে আমদাহ গ্রামের দিকে বাড়ি ফিরছিলাম। কিছুদুর এগিয়ে বয়েজমোড় পার হতেই বালু ব্যবসায়ী শহীদ ট্রেডার্সের বাড়ির নিকট পৌছা মাত্র রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে একজন ভ্যানের গতিরোধ করে সালাম ভাইকে ডেকে ভ্যান থেকে নামিয়ে নেয়। এ সময় সেখানে আগে থেকেই ওৎ পেতে থাকা আরও ৮/১০ জন লোক তাকে ঘিরে ধরে মারধর করতে শুরু করে।

নিহত মাহবুব সালামের স্ত্রী সিমুয়ারা খাতুন(৩৩)র অভিযোগ, গতকাল(বুধবার) কুষ্টিয়া কোর্টে কয়েকজন মাদক কারবারীর যাবজ্জীবন জেল হয়েছে। ওই বিষয়ে সালাম তার ফেসবুকে ষ্ট্যাটাস দেয়ার কিছুক্ষন পরই টোকেন চৌধুরীর লোকজন বাড়িতে সালামকে খুঁজতে আসে। সে সময় সালাম বাড়িতে ছিলো না। বিষয়টি দৌলতপুর থানা পুলিশকে জানানোও হয়েছিলো। এছাড়া মাদক ব্যবাসায়ীদের বিরুদ্ধে কথা বলায় পূর্ব থেকেই যুবলীগ নেতা টোকেন চৌধুরীর লোকজনের সাথে বিরোধ চলে আসছিলো। তারই জের ধরে ওরা খুন করেছে আমার স্বামীকে। আমি আমার স্বামী খুনের বিচার চাই।

নিহতের স্ত্রী আরও জানায়, ‘হাসপাতালে যতক্ষন পর্যন্ত জ্ঞান ছিলে সেসময়ে সালাম বলছিলো, চেয়ারম্যান ও টোকেন চৌধুরীর চৌধুরীর লোকজন রাতের আঁধারে হঠাৎ এই হামলা চালায়। তারা সালামকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হাত-পায়ের রগ কেটে দিয়েছে।”

তবে এবিষয়ে দৌলতপুর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ৭নং হোগলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: সেলিম চৌধুরী মুঠোফোনে আলাপকালে বলেন, ‘এটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বশত: আমার ও আমার পরিবারকে হেয় করতে প্রতিপক্ষের লোকজন এসব কথা ছড়াচ্ছে। হত্যাকান্ডের মতো কোন নোঙড়া রাজনীতি আমি করিনা।”

তবে এবিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি বুলবুল আহমেদ চৌধুরী টোকনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। একাধিকবার কল করেও তার সেলফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আশরাফুল আলম জানান, বুধবার রাতে গুরুতর আহত অবস্থায় সালামকে ভর্তি করা হয়। তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা চলছিলো। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত দেড়টার দিকে তার মৃত্যু হয়। সালামের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর রক্তাক্ত জখম ছিলো। তার পায়ের লিগামেন্ট বিচ্ছিন্ন হওয়ায় অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরনজনিত কারণে মৃত্যু হয়েছে বলে প্রথামিক ভাবে ধারনা করছি।

এমামলার তদন্ত কর্মকর্তা দৌলতপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক মোস্তফা হাবিুবুল্লাহ(ওসি তদন্ত) জানান, ‘শনিবার দুপুরে গ্রেফতার তিনজনকে আদালতে সৌপর্দ করে রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত আগামী রবিবার বিমান্ড শুনানীর দিন ধার্য করে ৩জনকে কারাগারে প্রেরণ করেন।’ ‘পরিকল্পিত এই হত্যাকান্ডের প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটনে ঘটনাস্থলের একটি সিসি ফুটেজ বিশ্লেষনসহ সম্ভাব্য সব বিষয়কে বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত কাজ চলছে। এমামলায় এজাহার নানীয় অন্যান্য আসামীদেরও গ্রেফতারে পুলিশী অভিযান চলছে।’ এমামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে কে কোন পদের লোক বা কোন পরিচয়ের লোক তা বিবেচনার সুযোগ নেই, এটাই আইন।”

তবে এই হত্যাকান্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দৌলতপুরের রাজনৈতিক অঙ্গনে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। যে কোন সময় আরও বড় কোন ঘটনাও ঘটে যেতে পারে বলে শংকিত স্থানীয়রা আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের দাবি তাদের। তবে পরিস্থিতি সম্পূর্নরূপে পুলিশের নিয়ন্ত্রনে দাবি করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার আহ্বান করেছেন দৌলতপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক জাবীদ হাসান।

উল্লেখ্য, গত বুধবার ১২মে রাতে জাতীয় যুবজোট নেতা মাহবুব খান ভ্যানযোগে বাড়ি ফেরার পথে উপজেলার আল্লার দরগা বয়েজ মোড়ে পৌঁছালে পূর্ব থেকে ওৎ পেতে থাকা দূবুত্তরা তাকে ভ্যান থেকে জোর করে নামিয়ে রামদাসহ দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে রক্তাক্ত জখম করে। এ সময় মাহবুব খানের আত্মচিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে রাত দেড়টার দিকে মাহবুব খানের মৃত্যু হয়।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *