ইউসুফ সুমনঃ ভারতীয় প্রেমিকার সাথে দেখা করতে এসে অপহরণের হাত থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেলো আঃ রহমান অংঙ্কন নামের ঢাকার এক ব্যাবসায়ী। তবে নিজে রক্ষা পেলেও নগদ টাকা ও মোবাইলসহ খোয়াগেছে সাথে থাকা মুল্যবান মালামাল। ঢাকার এ ব্যাবসায়ী অপহরনের চেষ্টার অভিযোগে মোংলা বন্দরের ৫ নিরাপত্তা প্রহরীসহ ৭ জনের নামে মোংলা থানায় মামলা হয়েছে। ১০ জুন শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে বন্দর এলাকার বাস ষ্টান্ডে থেকে অপহরনের জন্য ব্যাবসায়ীকে জোর পুর্বক মাইক্রোবাসে উঠানোর সময় জনতা তাকে উদ্ধার করে পুলিশে খবর দিয়। পরে পুলিশ এসে ব্যাবসায়ীকে উদ্ধার করে এবং এর সাথে জড়িত দুই জনকে আটক করতে পারলেও ভারতীয় প্রেমিকাসহ অন্যান্যরা পালিয়ে যায় বলে জানায় পুলিশ।
থানার মামলা সুত্রে ও পুলিশ জানায়,
ঢাকার মোহাম্মাদপুর কাটাসুর এলাকার আঃ মান্নান মিয়ার ছেলে ষ্টেশনারী ব্যাবসায়ী আঃ রহমান অংঙ্কন (২৬) সাথে দেড় বছর আগে ফেইসবুকের মাধ্যমে পরিচয় হয় ভারতের পশ্চিম বঙ্গের বনগাও এলাকায় দিপু বাইনের মেয়ে পিয়াংঙ্কা বাইন (২৮)’র সাথে। সোসাল মিডিয়ায় দীর্ঘ দিনের আলাপচারীতায় ভারতীয় ওই নারীর সাথে প্রমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। চলতি বছরের গত ১৪ এপ্রিল ভালবাসা দিবসে দুই জনের সাথে প্রথম দেখা হয় খুলনার সোনাডাঙ্গায়। সোনাডাঙ্গার ৬ নং রোডের যাত্রা ফ্রাকসীপ নামের আবাসিক হোটেলে স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দুজনে প্রায় ৫দিন রাত যাপন করেছে বলে জানায় প্রেমিক অংঙ্কন। সেখান থেকে ভারতীয় ওই নারী নিজ দেশে চলে গেলে তাদের সম্পর্ক অটুট থাকে। দুজনার কথা হয় প্রতিনিয়িত। দ্বিতীয় বার ওই একই আবাসিক হোটেলে দেখা করার জন্য ঢাকা ও ভারত থেকে এসে পুর্ব পরিচয় অবস্থান করে।
একই সাথে মোংলা বন্দরের নিরাপত্তা প্রহরী জাফরের সাথেও সু-সম্পর্ক রয়েছে ওই ভারতীয় নারী পিয়াংঙ্কা বাইনের। দুজনে মিলে ঢাকার ব্যাবসায়ীকে অপহরণ করে মুক্তিপনের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করে তারা। সর্বশেষ শুক্রবার (১০ জুন) ব্যাবসায়ীর সাথে দেখা করার জন্য ভারত থেকে পিয়াংঙাকা বাইন মোংলায় এসেছে এবং তাকেও এখানে আসতে বলে। শুক্রবার দুপুরে প্রেমিক অংঙ্কন মোংলায় এসে প্রেমিকা প্রিয়াংঙ্কার সাথে দেখা করে সে। তবে সেখানে আগে থেকেই বন্দরের ৫ নিরাপত্তা কর্মচারীসহ কয়েকজন যুবককে ব্যাবসায়ীকে অপহরনের জন্য প্রস্তুত করে রাখে প্রেমিকা পিয়াংঙ্কা ও জাফর।
বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে সুন্দরবন দেখানোর কথা বলে সু-কৌশলে একটি জালিবোর্ট (নৌযান) ভাড়া করে জাফর। এসময় অন্যান্যদের সাথে নিয়ে নৌযানে করে বন্দরের পশুর নদীর মাঝ পথে নিয়ে তাকে হাত-পা বেধে মারধর শুরু করে এবং ব্যাবসাযীকে বিবস্ত্র করে মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারন করে অপহরণকারীরা। একই সাথে ব্যাবসায়ীর সাথে থাকা নগদ টাকা, মোবাইল ও মানিব্যাগসহ অন্যান্য মালামাল ছিনিয়ে নেয় মোংলা বন্দরের নিরাপত্তা কর্মচারী ঢাকার মুন্সিগঞ্জ জেলার দেলোয়ার হোসেন’র ছেলে জামাল হোসেন (২৫), জাফর (২৬), দুলাল (২৫), তারভির (২৭) আখিরুল (২৫)। বিষয়টি নদীতে অন্যান্য নৌযান কর্মীরা দেখে ফেলায় সেখান থেকে দ্রæত তাকে বাস স্টান্ডে নিয়ে জোর পুর্বক একটি মাইক্রোবাসে উঠানোর চেস্টা করে অপহরণকারীরা। এসময় ব্যাবসায়ী অংঙ্কনের ডাক চিৎকারে স্থানীয়রা ছুটে এসে তাকে রক্ষা করে এবং পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে। এসময় ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে বন্দরের নিরাপত্তা প্রহরী জামাল হোসেন ও বোট চালক ওবায়দুর হোসেনকে আটক করে পুলিশ। কিন্ত কৌশলে ভারতীয় প্রেমিকা পিয়াংঙ্কা বাইন ও অন্যান্যরা দ্রæত সেখান থেকে সটকে পরে। শুক্রবার রাতে বন্দরের ৫ নিরাপত্তা প্রহরী, বোট চালক ও ভারতীয় প্রেমিকা পিয়াংঙ্কা বাইনকে আসামি করে মোংলা থানায় মামলা দায়ের করা হয়। শনিবার দুপুরে আটক দুই জনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
মোংলা থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মাদ মনিরুল ইসলাম ঘটনার সত্যাত স্বিকার করে বলেন, প্রেমের ঘটনায় ঢাকার ব্যাবসায়ীকে অপহরণের ঘটনায় বন্দরের কয়েকজন নিরাপত্তা প্রহরনী জড়িত রয়েছে। খবর পেয়ে ঘটনা স্থল থেকে পুলিশ দুই জনকে আটক করেছে। এছাড়া ভারতীয় প্রেমিকা ও বন্দরের ৫ নিরাপত্তা প্রহরীসহ ৭জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা নেয়া হয়েছে। মামলা দায়ের শেষে শনিবার দুপুরে আটক ২ জনকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে বলে জানায় মোংলা থানার এ কর্মকর্তা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *